শ্রেণিকক্ষে বন্ধুত্বের খুনসুটি, হঠাৎ শিক্ষক আসতেই সবাই চুপ। শুরু হলো ক্লাস। দীর্ঘ ক্লাস শেষে ছুটির ঘণ্টার অপেক্ষা। স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জটলা। ব্যাগ কাঁধে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরা। এটিই ছিলো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিরায়িত দৃশ্য। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি ছিল শিক্ষার্থীদের জীবন। অনলাইনে ক্লাস আর অ্যাসাইনমেন্ট করতে করতে মানসিকভাবে একঘেয়েমিতে ভুগছিল কিশোর-কিশোরীরা। তবে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় পর আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
অভিভাবকরা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে। যদিও বিধিনিষেধ বাচ্চাদের বন্ধুত্বের মধ্যে তেমন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এখন অনেকটা খোলা মনেই স্কুলে যাবে তারা।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে অফিস আদেশ দিয়েছে। এতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার কমে যাওয়ায় পরর্বতী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ বিভাগের আওতাধীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান ১৫ মার্চ হতে অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
অন্যদিকে মঙ্গলবার প্রাক-প্রাথমিকেরও ক্লাস শুরু হবে। সপ্তাহে দুইদিন অর্থাৎ মঙ্গল ও রোববার এ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নেবে।
সরকারের এ ঘোষণায় খুশি শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তবে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অনেকের টিকার দুই ডোজ না থাকায় বিপাকে পড়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী- ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস করতে দুই ডোজ টিকা লাগবে। কিন্তু এখনো অনেক শিক্ষার্থী টিকার আওতার বাইরে রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্র জানায়, সারাদেশে ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী আছে। ৯ মার্চের তথ্য অনুযায়ী- তাদের মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০ জনকে দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আর প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৮০৩ জনকে। অর্থাৎ প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ আর ৮০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছে।
মাউশি কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনার প্রয়োজন। তা না হলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীরা বাধার সম্মুখীন হবে।
এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ দেখায়। পরে শিক্ষামন্ত্রণাললের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ ইমামুল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখনো কেন শিক্ষার্থীদের দুইডোজ টিকা দেয়া হয়নি তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। শুধু স্কুলে ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নেয়া নয়, নিজেকে ও আশপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতেও তাদের টিকার আওতায় আসা উচিত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। কিন্তু সশরীরে ক্লাস বন্ধ হলেও অনলাইনে চালু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর সব ধরণের বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার।
অভিযোগ ছিল, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। তবে বন্ধ থাকে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপর একাধিক দফায় স্কুল-কলেজ খোলার তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা আবারো পিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দাবি ও করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনা পরিস্থিতি ও সংক্রমণের হার কমে আসায় ফের ২২ ফেব্রুয়ারি শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাস চালু করা হয়। এরপর ২ মার্চ সীমিত আকারে প্রাথমিক স্তরে পাঠদান শুরু হয়। সর্বশেষ গত শনিবার শনিবার (১২ মার্চ) একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালুর ঘোষণা দেন।
এর আগে পুরোদমে স্কুল কার্যক্রম চালু হতে দেরি হওয়ার কারণ জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সাংবাদিকদের তিনি জানান, পরিস্থিতি ভাল হলেও অনেক বিষয় আমাদের বিবেচনা করতে হচ্ছে। একটি মফস্বল স্কুলের পরিসর অনুযায়ী শিক্ষার্থী কম। অন্যদিকে ঢাকার স্কুলগুলোতে জায়গা ছোট ও শিক্ষার্থী কম। স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে।
Leave a Reply