বেশ কিছুদিন হলো ফরিদপুরে রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে গেছে একেবারেই। প্রবল প্রতাপশালী সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠজনরা ছিটকে গেছেন জেলার রাজনীতি থেকে। কারওবা ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। এমনই এক পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ছেয়ে গেছে পোস্টার ও বিলবোর্ডে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেক্টেড হন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়।
বৃহত্তর কলেবরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। আর এই সভাকে কেন্দ্র করে জেলা নেতাদের মধ্যে ব্যাপক তোরজোড় শুরু হয়েছে। কেউ কেউ নিজের ছবি সংবলিত কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি দিয়ে ব্যানার, বিলবোর্ড তৈরি করে শহরের আনাচে-কানাচে স্থাপন করেছে। আবার কেউ কেউ নিজেকে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী উলেখ করে বিলবোর্ড টানিয়েছেন। শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে শহরের গোয়ালচামট হোটেল রাফেলস ইন হোটেলে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ নেন্দ্রীয় নেতারা।
এরই মধ্যে বর্ধিত সভার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন। দুপুর দুইটার পরে এই সভা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ জেলার আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে তৎকালিন কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করেন । পরে ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন:
এবার দলের সভাপতি পদের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান সভাপতি এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, সহ-সভাপতি শামীম হক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফারুখ হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন- সাবেক কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদ, যুবলীগ আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদার ও শিল্পপতি যশোদা জীবন দেবনাথ।
পদ পাওয়ার ব্যাপারে শামীম হক বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের এক করে কাজ করেছি। দলকে সুসংহত করেছি। করোনাকালে সাধারণ মানুষকে দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছি। প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করবেন। ফারুক হোসেন বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। ইয়াছিন কলেজের ভিপি ছিলাম। জেলা যুবলীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সভাপতি হিসাবে মনোনীত করলে আমি দলকে শক্তিশালী করবো। অমিতাভ বোস বলেন, বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাধরণ সম্পাদক মনোনীত করলে আমি দলের হয়ে কাজ করবো।
বর্ধিত সভার প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, একটি বড় দলের সামান্য গ্রুপিং থাকতেই পারে, তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কেউ সেটা প্রমাণ করা দুঃসাহস দেখাবে না এমটি প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, এই সভায় জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরতে পারবেন, এমনকি দল চালাতে যে কোন গঠন মূলক পরামর্শ দিতে পারবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। বিশেষ অতিথি আরেক প্রেসিডিয়াম কর্নেল ফারুক খান এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু এমপি প্রমুখ।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, সভানেত্রী নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা আগামী সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করবেন এবং সম্মেলন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে করনীয় বিষয়ে আমাদের নিদেশ দিবেন।
Leave a Reply