ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল দখল করতে রাশিয়া হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, রকেট ও আর্টিলারি দিয়ে ডনবাসের শহরগুলোর ওপর মস্কো বোমা হামলা করছে।
এদিকে রাশিয়া কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর এই হামলার ব্যাপারে বহুদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। প্রথম দিকে ইউক্রেনের বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ আর দেশটির সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল রাশিয়া। কিন্তু শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ার পর রুশ প্রতিরক্ষা দফতর জানায়, তাদের অভিযানের প্রথম ধাপ সাধারণভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা রাজধানীর আশেপাশের এলাকা থেকে সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছে।
সে সময় রাশিয়া ঘোষণা করেছিল যে, এখন তাদের মনোযোগ থাকবে রুশ ভাষাভাষী সদ্যমুক্ত ডনবাস এলাকার দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে এ যুদ্ধ অনেক দিন ধরে চলতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের এই প্রাচীন শিল্পাঞ্চলকে মুক্ত করতে হবে।
এদিকে সোমবার রাতেও ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরে বোমাবর্ষণ করেছে রুশ বাহিনী। এদিন পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাত জনের প্রাণ গেছে। এছাড়া খারকিভ শহরে আবাসিক ভবনের ওপর রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে অন্তত দুই জন বেসামরিক নিহত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা সম্পর্কে সতর্ক করতে প্রায় সারাক্ষণই বিভিন্ন শহরে বাজছে যুদ্ধের সাইরেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে মোট ৩১৫টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হেনেছে। উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের বন্দরনগরী ওডেসার কাছে মিকোলায়েভের ওপরও আক্রমণ হয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের ওপর পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর আগে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলো দুর্বল করে দেয়ার চেষ্টা করছে মস্কো।
ডনবাস কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ডনবাসের কথা বলেন তখন তিনি ইউক্রেনের কয়লা ও ইস্পাত উৎপাদনকারী অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ দুইটি অঞ্চল লুহানস্ক ও ডোনেস্কের পুরো এলাকাকে বোঝান। এই এলাকা দক্ষিণের বন্দরনগরী মারিউপোল থেকে শুরু করে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো মনে করে, রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে নেয়ার মাধ্যমে ডোনেস্ক থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যুক্তরাজ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একজন বিশেষজ্ঞ স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স।
তিনি বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে, ক্রেমিলন এই অঞ্চলকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে। যার অর্থ এই অঞ্চল ইউক্রেনের চেয়েও অনেক বেশি রাশিয়ার। এসব অঞ্চলে হয়তো রুশভাষী লোকেরাই বসবাস করেন, কিন্তু তারা এখন আর রুশপন্থী নন।
পোল্যান্ডে অবস্থিত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোচান কনসাল্টিংয়ের প্রধান কনরাড মুজাইকা। তিনি বলেন, মারিউপোল এক সময় ছিল ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি রুশপন্থী শহরগুলোর একটি। এটি এমন মাত্রায় ছিল যা আমার ধারণাতেও ছিল না। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর রাশিয়া দাবি করছে যে, তারা লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ এবং ডোনেস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
এখন এই পুরো অঞ্চলকে আয়ত্তে নিতে হলে রুশ প্রেসিডেন্টকে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি যদি এক সময় বিজয় অর্জন করতেও সক্ষম হন, ওই অঞ্চল এতো বৃহৎ যে সেখানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply