অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই বরকত ও রুবেলের ঘনিষ্ট সহযোগী এবং ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১ আগস্ট) দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে তাকে আগামী ১৬ আগস্ট হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদক উপ-পরিচালক রেজাউল করিম সই করা তলবি নোটিশ তার ফরিদপুরের বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সিদ্দিকুর ফরিদপুরে আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে বেশি পরিচিত। যারা এরইমধ্যে দুর্নীতির মামলায় দুদকের আসামি। সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও মাদক পৃষ্ঠপোষকসহ অঢেল সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। শুধু অভিযোগই নয়, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কাছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ স্বীকার করেছেন সিদ্দিকুর।
১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে সিদ্দিকুর বলেন, ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি। কিছু বছর ঢাকায় ব্যবসা করার পর ২০১৬ সালের দিকে আবার ফরিদপুরে চলে যাই। সেই সময়ে ঠিকাদারি ব্যবসায় গণপূর্ত ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যবসা শুরু করি। সেখানে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কাজ করতে হয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রামে ডোনেশন দিতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চাঁদা দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করেছি।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানকে চাঁদাবাজির মামলায় ২০২১ সালে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহযোগিতায় ধানমন্ডির ১১ নম্বর সড়কের একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
ওই সময় এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, সিদ্দিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর শহরে বিভিন্ন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিভিন্ন হাটবাজার ইজারা, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখল, বাসস্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবি ঘাট দখলসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ত্রাস সৃষ্টি করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় চারটি মামলা আছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত। অপর একটি হত্যা মামলা। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তিনটি মামলায় তার নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলাটি তদন্তাধীন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও চারটি সিআর মামলা আছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর প্রায় ৭৩ কোটি টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযােগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। যার তদন্ত এখনও চলমান।
Leave a Reply