সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া ‘নিখোঁজ’ ইয়াশা মৃধা সুকন্যা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত পুলিশ কর্মকর্তা সুকন্যাকে হাজির করেন। একই সঙ্গে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করার আবেদন করেন তিনি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর তাকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন।
এদিন আদালতে সুকন্যার মা তার মেয়েকে নিজ জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। বিচারক মায়ের আবেদন নামঞ্জুর করে সুকন্যাকে তার নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন।
তিনি জানান, আদালত সুকন্যার বয়স ১৮ বছর হওয়ায় তার মায়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর সুকন্যাকে তার নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন।
এদিন আদালতে সুকন্যা জবানবন্দিতে বলেন, আমি একটি ছেলেকে বিয়ে করি। আমার বাবা বিদেশে থাকেন। আমার মা আমাকে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দেন। আমি স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি।
এর আগে, ২০ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ইয়াশার মা নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমি মেয়ের সন্ধান চাই। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার মেয়ের নাকি মানসিক সমস্যা। আবার ফোনে মেসেজ আসে আমার মেয়েকে নাকি মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪-তে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। আমরা সেখানে গিয়ে খোঁজ পাইনি। সংশ্লিষ্ট থানা থেকেও বলেছে, এই ধরনের কেউ ওই এলাকায় ঘুরতে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, আমি আমার মেয়েকে জীবিত অবস্থায় শুধু ফিরে পেতে চাই। কোনও বিচার চাই না, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই না।
এর আগে, লিখিত বক্তব্যে নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমার স্বামী লন্ডন প্রবাসী জুনায়েদ জাহাঙ্গীর। ঢাকায় স্বামীর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের একমাত্র মেয়ে ইয়াশা মৃধা সুকন্যা চলতি বছর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত ২৩ জুন আমার মেয়েকে মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে কলেজে নিয়ে যাই। বেলা সাড়ে ১২টায় মেয়ে কলেজে প্রবেশ করে। বরাবরের মতো আমি কলেজের বাইরে অভিভাবকদের বসার কক্ষে অপেক্ষা করি। পরীক্ষা শেষ হবার কথা বিকাল ৩টায়। সব ছাত্রী যখন পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আসে, আমার মেয়ে বের হয়নি। মেয়ের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে না পারায় আমি বিকাল ৪টায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, আমার মেয়ে সেদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও আমার মেয়েকে পাইনি। মেয়ে তার মোবাইল আমার কাছে দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, সুকন্যাকে না পেয়ে আমি তার ফোন চেক করতে থাকি। সেখান থেকে ইশতিয়াক নামে একটা ছেলের সঙ্গে কথোপকথন দেখতে পাই। পরে রমনা মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাই এবং একটি মামলা দায়ের করি।
পুলিশ তদন্তে সহযোগিতা করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের পাঁচ দিন থানায় শুধু বসিয়ে রেখেছে। আর বলেছে, তদন্ত করছি, আপনারা বসে থাকেন। ইশতিয়াক কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। তার বন্ধু সালমান ৭ জুলাই জামিন পায়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইয়াশার মামা দিদারুল ইসলাম, চাচা, শিক্ষিকা ও বান্ধবীরা।
Leave a Reply