ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের (ফপই) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ‘ফপই অ্যালামনাই এসোসিয়েশন’ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রায় ১৬ শ’ অ্যালামনাই সদস্য এতে যোগ দেন। সকালে জাতীয় ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) শহরের বায়তুল আমান ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে এ সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্বে মাথা উঁচিয়ে টিকে থাকার জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে উন্নত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হবে। অন্যথায় ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে পারবো না। এজন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি এবিএম আনোয়ারুল হক তার বক্তব্যে সে সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী না হলেও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসে ছাত্রজীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন আরো অনেকেই। বিশেষ করে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স শাখার পূর্বপাশে অবস্থিত এ ক্যাম্পাসের নানা স্মৃতিচারণা করেন রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে যোগ দেন অনেক সাবেক শিক্ষার্থী। সারাদিন আনন্দঘন পরিবেশে পুরনো সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের সাথে স্মৃতিময় সময় কাটান তারা। সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো: আককাছ আলী জানান, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর টেকনিক্যাল কলেজ। ১৯৬৭ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বছর পূর্তি করে। ৩০ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে ছয়টি সেকশনে ৪ হাজার ৮ শ’ শিক্ষার্থী রয়েছেন। ২৫টি ওয়ার্কশপে পুরনো যন্ত্রপাতি ছিল। তিনটি ওয়ার্কশপ অত্যাধুনিক করা হয়েছে। আরো পাঁচটি অত্যাধুনিক করা হবে শিগগির। এখানে মোট পাঁচটি হোস্টেল রয়েছে। দু’টি ছেলেদের ও তিনটি মেয়েদের। শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে ৩৮৩টি পদ রয়েছে। নির্দিষ্ট কারিকুলামের পাশাপাশি ডিবেট ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, রোভার স্কাউট কার্যক্রমসহ নিয়মিত কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী অনুপাতে নানাবিধ সংকটও রয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ।
ফপই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে ৫০ বছর পেরোনোর পর এ ইন্সটিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন করে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলো।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠানে সমাগতদের আপ্যায়নে বেশ আয়োজন থাকলেও পরিবেশনে ঘাটতি দেখা গেছে। মূল অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিময় অতীত রোমন্থনের সুযোগ দেয়া যায়নি। ফলে অনেকে আশাহত হয়েছেন। আয়োজকরা জানান, প্রথম পর্বে আলোচনা সভা শুরু হতে বেশ বিলম্ব হয়েছে। তাই নির্দিষ্ট অতিথিদের বাইরে কাউকে সুযোগ দেয়া যায়নি। আবার সময় স্বল্পতায় অতিথিরাও স্মৃতিচারণের বিশেষ সুযোগ পাননি। আগতদের জন্য সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের গেঞ্জি বানানো হলেও উপস্থিতিদের সে গেঞ্জি পরতে তেমন দেখা যায়নি। তবে এমন একটি বর্ণাঢ্য আয়োজনে র্যালীর আয়োজন না করায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে আলাপকালে অনেকে জানান, উৎসবকে ঘিরে দু’টি পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে অনুষ্ঠানের কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। তবে শিক্ষাজীবনের ভালোবাসা জড়িয়ে থাকা এ অঙ্গনে সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে এসে সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর-বাইরে একে অপরের সাথে আনন্দময় সময় কাটাতে কার্পণ্য দেখাননি।
উল্লেখ্য, ফপই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, ফপই অধ্যক্ষ মো: আককাছ আলী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা, ফপই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি এবিএম আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম।
Leave a Reply