মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ও ইফতারি খাওয়াকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় রামদা ও ছ্যাঁনদা দিয়ে লাবলু মাতুব্বর (৩৫) ও চাম্পা বেগম (৪০) নামে দুইজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে প্রতিপক্ষ। একই সাথে এসময় বেশ কয়টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড় বালিয়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে স্থানীয়রা আহত চাম্পা বেগম ও লাবলু মাতুব্বরকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর মধ্যে লাবলু মাতুব্বরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে, লাবলুর অবস্থা সংকটপূর্ণ বলে পরিবারের দাবী।
এদিকে বুধবার (০৫ এপ্রিল) বিকাল ৪টার দিকে দিকে এ অতর্কিত হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়াগট্টি বাজারের প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সময় গট্টি ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করে এলাকাবাসী। এ সময় তারা চিহ্নিত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বক্তারা সালথা থানার গট্টি ইউনিয়নের সন্ত্রাসী বাহিনীর চাঁদাবাজি, মারামারি, ঘরবাড়ি ভাংচুর, মানুষ হত্যা চেষ্টা ও লুটপাট সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় এলাকাবাসী খোরশেদ খান, ইসহাক মাতুব্বর, পাভেল প্রমূখ।
হামলায় সুরকির আঘাতে আহত হওয়া চাম্পা বেগমের স্বামী শাহজাহান মুন্সি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ইশারায় স্থানীয় ওয়ালিদ ফকির ও মনির মোল্যা ওরফে মনি মোল্যার নেতৃত্ব কয়েকশ লোকজন এ হামলা চালিয়েছে। আমার স্ত্রী চাম্পাকে তারা সুরকি দিয়ে পেটে কোঁপায়। পাশের বাড়ির বিদেশ প্রবাসী লাবলু মাতুব্বর ঠেকাতে এগিয়ে আসলে তাকেও রামদা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এসময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। আমরা এঘটনায় থানায় মামলা করার পর তারা আবার প্রাণনাঁশের হুমকিধামকি দিচ্ছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওয়ালিদ ফকির ও মনির মোল্যা। তারা এ হামলার সাথে জড়িত নয় বলে দাবী করেন।
গত ০২ এপ্রিল সন্ধ্যায় সালথা উপজেলার বড় বালিয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ও ইফতারি খাওয়াকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মহিলাসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়। এই ঘটনায় ৩ এপ্রিল সালথা থানায় ৪২ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করে হামলার শিকার পরিবার। এ হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই রাতেই আব্দুল হক খান, কুদ্দুস মাতুব্বরসহ ৭ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ পরদিন ফরিদপুরের আদালতে প্রেরণ করলে এর মধ্যে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরকে জামিন দেয় আদালত। পরে তারা ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাংবাদিকদের কাছে দাবী করেন পুলিশ তাদের মারধর করেছে। তবে, পুলিশের দাবী এ হামলার সাথে হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বর জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছেন। এখন হামলার ঘটনায় হওয়া মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। যেটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন।
এব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সাথে সাথে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরসহ ৭ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ফরিদপুরের আদালতে প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বর আদালত থেকে জামিনে আছেন।
আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরকে পুলিশ আটকের পর মারধর করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি শেখ সাদিক বলেন, তাদের কোনো মারধর করা হয়নি। আমি কেন তাদের মারতে যাবো? তারা অপরাধ করছে কি-না সেটা আদালত বিচার করবে। অপরাধ করলে আদালত শাস্তি দিবে। আমি মারবো কেন? তারা মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের এ নাটক সাজাচ্ছে বলে দাবী এ পুলিশ কর্মকর্তার।
Leave a Reply