মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর : ফরিদপুরের সদর উপজেলার শ্যামসুন্দরপুর মধুর গাইরার বিলে প্রায় ১০ একর ৬২ শতাংশ জায়গা জুড়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে হাঁস ও মৎস্য খামার প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমিষের ঘাটতি পূরণ সহ ওই এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে বিরাট ভুমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে অনুমতি নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল জলাধার তৈরির কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনে গেলে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা যাবে। পাশাপাশি মিলবে হাঁস ও হাঁসের ডিম। এছাড়া বিশাল এ মৎস্য খামারের চারপাশে তৈরি করা উঁচু চালাতে লাগানো হবে ভিয়েনামের উচ্চ ফলনশীল নারকেল গাছ ও নানা জাতের সব্জি। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রফতানি করা যাবে এসব খাদ্য পণ্য।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মধু গাইরার বিলের এক ফসলি ওই জমিতে মাটি কেটে চালা তৈরি করা হচ্ছে। গত তিনমাস যাবত চলছে এ কাজ। আরো কয়েকমাস লেগে যাবে জলাধার তৈরির এ কাজ। দেখা গেছে, বিশাল এ প্রকল্পের দক্ষিণ-পশ্চিমে আগে থেকেই রয়েছে এক একর ৬২ শতাংশের একটি বড় পুকুর। এছাড়া পুরো ওই প্রকল্পের জমিতে ছোটবড় আরো চারটি পুকুর ও জলা রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার মতো ব্যবস্থা না থাকায় সেখানকার পানি থাকেনা। আবার অপেক্ষাকৃত নিচু জমি হওয়ায় সেখানে ভাল ফসলও পাওয়া যায়না। শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ ফরিদ জানান, তার ভাই ফরহাদ শেখের মালিকানাধীন ২০ নং শ্যামসুন্দর।মৌজার বিভিন্ন দাগের ৯ একর এবং পাশের ২১ নং গোবিন্দপুর মৌজার ১ একর ৬২ শতাংশ জমিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পের নাম মেসার্স মরিয়ম হাঁস ও মৎস্য খামার প্রকল্প। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বেকার ও দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন তারই অংশ হিসেবে আমাদের নিজেদের ক্রয়কৃত ১০ একর ৬২ শতাংশ সম্পত্তির উপর হাঁস ও মৎস্য খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত জমিটি প্রসিদ্ধ বিল। এখানকার পুরো জমি নিম্ন জলাভূমি হওয়ায় বছরের ৬ মাস জলাবদ্ধ থাকে। এসময়ে কোন প্রকার ফসল আবাদ করা যায়না। ফলে ওই জমি বছরের অর্ধেক সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় কোন প্রকার উপকারে আসেনন। এই জমির আশেপাশে কোন বাড়ী ঘর বা স্থাপনা না থাকায় বেকু ও ট্রাকের মাধ্যমে বিলের জমি পূণঃ খনন করে চারপাশে উঁচু পাড় বাঁধা হচ্ছে। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর হতে একাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ফরিদপুর বিল, বাওড় ও জলাভূমির অঞ্চল হলেও অনেক জলাভূমি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এখানে প্রয়োজনীয় আমিষের ঘাটতি রয়েছে বর্তমানে। আমরা চাচ্ছি যে, এই ঘাটতি পূরণে ভুমিকা রাখার পাশাপাশি আমরা মৎস্য সম্পদ রপ্তানিও করতে পারবো। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে শুধু ৫০ লাখ টাকার মাছই বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, বিশাল জায়গা জুড়ে এই হাঁস ও মাছের খামার গড়ে তোলার কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয়রাও খুশি। শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ খান বলেন, মধু গাইরার বিল মূলতঃ প্রাচীন জলা ছিলো। তবে কালে কালে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে বাণিজ্যিকভাবে বর্ষায় মাছও তেমন মিলেনা, তেমনি আবার ডোবা জমি থাকায় শুকনো মৌসুমে তেমন ভালো ফসলও হয় না। বৃষ্টি হলে মাছ বের হয়ে চলে যেত। এখন এই জায়গায় মাছের খামার হলে আমরা বহুলোক কাজ করে খেতে পারবো। স্থানীয় রুহুল শেখ বলেন, এই মৎস্য খামার হলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এলাকার গরিব মানুষেরা কাজ করে খেতে পারবে। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন লোক এখানে কাজ করছে। এছাড়া অনেক যুবক লেখাপড়া করে কিন্তু বেকার রয়েছে, প্রকল্পটি হলে তাদেরও কর্মসংস্থান হবে। যা আমাদের এলাকার জন্য ভাল হবে। প্রকল্পটি ঘিরে এলাকার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
Leave a Reply