লেগুনার হেলপার হয়ে ক্লু-লেস একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামি ধরতে সক্ষম হয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার এস আই বিল্লাল আল আজাদ।

এ বিষয়ে এসআই বিলাল আল আজাদ জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে টানা পাঁচ দিন হেলপারি করে দিনে তিনশ টাকা আয় হয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি সক্ষম হয় আসামীদের গ্রেপ্তার করতে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. রুবেল, মো. রিপন, মো. মঞ্জুর ও আবদুর রহমান।

জানা যায়, চলন্ত লেগুনা থেকে এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু বলে মরদেহের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে সেটি অপমৃত্যু নয়, হত্যা।এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি অজ্ঞাত আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন তার ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে আহত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকেলেই খাইরুল ইসলাম নামে এক যুবক যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ বলেন, এ ঘটনার তদন্তভার পেয়েই গুলিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লেগুনা শনাক্ত করা গেলেও নম্বর প্লেট দেখা যায়নি। তবে লেগুনায় যাত্রী ওঠার সিঁড়িতে লাল রং ছিলো। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে হত্যাকাণ্ডে জরিতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি।

তিনি আরও বলেন, টানা চারদিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেলপারি করি। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগাং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির-আখড়া থেকে নিউমার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি রুটে হেলপারি করি। এ থেকে প্রায় ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই।

এসআই বলেন, তবে হেলপার হয়ে লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করলে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

তিনি বলেন, কিন্তু সেই লেগুনা যে চালাতো সে এ ঘটনায় জড়িত ছিলো না। তাকে ধরতে পুলিশ তার গ্রামে গেলে পুলিশ জানতে পারে চালক সত্য কথা বলছে ঘটনার আগেই তিনি গ্রামে চলে এসেছিলেন। পরে এসআই আবার লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান।

এসআই বিল্লাল বলেন, আমরা দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। গ্যারেজ থেকে বলা হয়, ওই দুইজন বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আর বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দুই-তিনদিন ধরে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর নামের ওই চালককে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে জানতে পারি, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষপর্যন্ত তাকে আটক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে, আটকের বিষয়টি গোপন রেখে রহমানকে মূলত চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল এবং তার মাধ্যমে মঞ্জুরকে খোঁজা হচ্ছিল। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের দুইজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে পরিচয় লুকিয়ে করি হেলপারি।

আটকদের তথ্যমতে, ফ্লাইওভারের ওপরের মরদেহটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারের ওপরে নিয়ে এসে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন আটকরা। ছিনতাইয়ের পর চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিলে মহির মারা যান।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, খুব অল্পসময়ের মধ্যে ক্লু-লেস এ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। শিগগিরই এ মামলার